Fri. Apr 26th, 2024

পিতৃহীন মাহিনুরের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহের কাছে হার মেনেছে দারিদ্র ও শারীরিক সীমাবদ্ধতা।

মিজানুর রহমান মানিক

 

মুখেজন্মের পর যাদের  সোনার চামচ জোটেনা, অভাব যদি হয় নিত্য সঙ্গী, তাদের জন্য “ শিক্ষা ” যত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারই হোকনা কেন, এই শিক্ষাটা তাদের জন্য হয়ে ওঠে চরম তামাশার । কিন্তু পিতৃহীন মাহিনুরের পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহের কাছে হার মেনেছে সীমাহীন দারিদ্র ও তার শারীরিক অক্ষমতা।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বনগ্রামের মৃত সোনামিয়া সিকদারের মেয়ে মাহিনুর। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে মাহিনুর ৫ম, মাহিনুরের ছোট একটা ভাই রয়েছে। বড় ২ ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে, অন্য ২ বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে।

মাহিনুর সদর উপজেলার ডালনিয়া আই, এ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির মানবিক বিভাগে মেধাবি শিক্ষার্থী। Mahinur is at the veranda of the School

মাহিনুরের সাথে কথা বলে জানা যায় তার ও পরিবারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়গুলোর কথা। মাহিনুরের জীবনে প্রথম ঝড় তাকে পঙ্গুত্ব উপহার দেয়। ২০০৭ সালে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ আসার পথে নবীনগর নামক স্থানে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় তাকে তার বাম পা হারাতে হয়। এরপর একটি পা এবং ক্র্যাচের সাহায্যে তাকে ছুটে বেড়াতে হয় স্কুলের উদ্দেশ্যে, কখনো সাংসারিক কোন কাজে। বিভিন্ন ব্যক্তির আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাহিনুর (গতবছর) ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে সরকারি ভাবে একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা হলে তার চলাচল পূর্বের চেযে অনেকটা সহজ হয়।

মাহিনুর আরো জানায়, তার ষাটোর্ধ বাবা ঢাকার বঙ্গবাজারে দিন মজুরির কাজ করতেন, যা আয় করতেন, তাতে তার বাবা ও গ্রামের বাড়িতে থাকা ৩ জনের সংসার কোনো রকমে চলতো, ছোট ভাইটা স্কুলে যেত। কিন্তু এবারও বিধি বাম। মাহিনুরের বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেন। ফলে, বাবার মৃত্যুতে অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়ে তাদের পরিবার, কিন্ত দমবার পাত্রী নয় মাহিনুর। মাহিনুরের বিশ্বাস, ঝড় কিংবা আধাঁর স্থায়ী হবেনা, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করবেন। বড়ভাই, বোনেরা তাদের সংসার চালিয়ে যতটুকু পারছে খেয়াল করছে, এটাই মাহিনুরের কাছে অনেক। অদম্য মাহিনুর, পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায় সে।

একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চায় মাহিনুর।

মাহিনুরের মা হাসিনা বেগম (৫৩) বলেন, মাহিনুরের বাবা বেঁচে থাকতে একটা গতি ছিলো, আমার মনেও একটা সাহস ছিলো, কিন্ত ওর বাবার মৃত্যুর পর আমি চারদিকে শুধুই অন্ধকার দেখছি, ঠিকমতো খাওয়াই যাদের সমস্যা, তাদের জন্য পড়াশুনা মানায়? একেবারে ছোট ছেলেটা এখন স্কুলে যায়না, বয়স কম হওয়াতে কেউ কোনো কাজও দেয়না। মাহিনুরকে পড়াশুনার কথা বললে সে বলে, যতকিছুই হোক, সে পড়াশুনা ছাড়বে না।

ডালনিয়া আই, এ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লতিফা আক্তার শিউলি বলেন, মাহিনুর আমাদের স্কুলের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অন্তরে থাকা একটা মেয়ে, ওর পরিবারের সার্বিক অবস্থা আমরা জানি, এজন্য পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে মাহিনুরের জন্য যতটুকু করনীয় আমরা করছি  এবং ভবিষ্যতেও করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.