Tue. Apr 16th, 2024

প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে ক্ষমতা দেখিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এছাড়া স্কুলে আসলেও তিনি কোন ক্লাস করান না। সারাদিন পড়ে থাকেন মোবাইল ফোন নিয়ে। ইচ্ছে হলেই চলে যান স্কুল থেকে। শিক্ষক নেতা তার প্রভাব যেমন খাঁটিয়েছেন, তেমন ম্যানেজ করেছেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকেও। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবের কারণে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক অনেকটাই নিরুপায়। এমন সব অভিযোগ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১০২ নং বর্ণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান। এর কিছুদিন পর তিনি শুরু করেন শিক্ষক রাজনীতি। যোগ দেন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ নামের একটি সংগঠনে। বর্তমানে তিন ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সাল থেকে সংগঠনের নানা কাজের অজুহাতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই রাজধানী ঢাকাতে থাকতেন তিনি। মাসে একবার এসে জোর করেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন তিনি। স্কুল কমিটি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানালেও কাজ হয়নি তেমন। একাধিক অভিযোগের পর ২০১৬ সালে বেতন বন্ধ হয়ে যায় আসাদুজ্জামানের। প্রভাব খাঁটিয়ে আবার ফিরে আসেন পূর্বের অবস্থানেই। ২০১৬ সালে বিএড করার জন্য চলে যান ঢাকায়। বিএড শেষ করে আসলেও তার কোন পরিবর্তন হয় নি। এভাবে চলেছে আরো দুই বছর। নতুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাটি জানতে পেরে আসাদুজ্জামানকে আর ছুটি না দেয়ার মৌখিক নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষককে। তাতেও কাজ হয়নি খুব একটা। হাজিরা খাতায় দেখা যায় গত ২২ আগষ্ট থেকে পর পর ৪ দিন অনুপস্থিত থাকেন তিনি। এরপর দুই দিন স্কুলে আসার পর ১৩ দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন আসাদুজ্জামান। সেপ্টেম্বর মাসেও প্রায় একই অবস্থা। অক্টোবর থেকে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের চাপে স্কুলে আসলেও কোন ক্লাসই করান না তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আসাদুজ্জামান স্যার স্কুলে আসেন না। স্কুলে আসলেও আমাদের ক্লাস নেন না। হয় তিনি মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, না হয় চেয়ারে বসে ঘুমান।

অভিভাবক সদস্য ওসমান মোল্লা বলেন, আসাদুজ্জামান শিক্ষক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। তিনি এতো অনিয়ম করায় আমাদের সন্তানরা পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ছে, রেজাল্টও খারাপ করছে।

বর্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, আমি আসাদুজ্জামানের কাছে নিরুপায়। উর্দ্ধতন  কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। বর্তমানে নতুন ডিপিইও স্যার এসে চাপ সৃষ্টি করলে আসাদুজ্জামান স্কুলে আসলেও ক্লাস করান না। তিনি আরো বলেন, এ স্কুলে ২৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে আমিসহ ৩ জন শিক্ষক রয়েছি। তার মধ্যে একজনকে ডেপুটিশনে এখানে আনা হয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার সত্ত্বেও আসাদুজ্জামানের অনুপস্থিতির কারণে স্কুলের পড়া লেখার চরম ক্ষতি হচ্ছে। দিন দিন স্কুলের রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিয়াকত হোসেন ওই সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জানের স্বেচ্ছাচারিতার কথা অকপটে স্বীকার করে এ স্বেচ্ছাচারিতা থেকে স্কুলকে বাঁচাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান, বর্ণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামানের বিষয়টি জানার পর তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেই। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারায় আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। #

মিজানুর রহমান মানিক

গোপালগঞ্জ

০৩.১১.১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published.