Fri. Apr 19th, 2024

আমি খোলস বদলানো এক চমকপ্রদ প্রাণী। নকল মনুষত্বের আবরণ গায়ে মেখে, নীতিবাক্যকে পুজি করে মানবতার শেঁকড় উপচে দিয়ে আমিই এখন মানবতাবাদী বিশাল রাজনৈতিক প্লাটফর্মের মালিক। মিথ্যা প্রলোভন দিতে আমার পুজি বিনিয়োগ করতে হয়না, শুধু হারামি রক্তে মিশে থাকা ভেজাল কনিকাগুলোকে সঞ্চালন করে দুচারটে মিথ্যা বুলিতে হাজারো জনতাকে বশে আনার সামর্থ্য সঞ্চয় করেছি সেই পাকি পেতাত্নাকে অন্তরে লালন করে। আমি মহাশক্তিধর এক মীরজাফরের প্রজন্ম, যে নিজের কুট বুদ্ধিমত্তায় ত্যাগীদের সকল আত্নত্যাগকে নিমিষেই মুছে দিয়ে নিজের কৃতিত্ব জাহিরের মাধ্যমে রাজপথকে নিজের দখলে নিয়েছি। এই রাজপথ আজ আমার বিনাশী শক্তি আর বিত্তবৈভবের মস্তবড় হাতিয়ার।

আমি দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছদ্মবেশী এক ভয়ংকর কীট হলেও দেহের উপরিভাগে পরিধান করি আদর্শের বিশ্বাসী উর্দি, আর অন্তরে লালন করি দেশের অস্থিতিশীল ও ধ্বংসাত্মক রূপরেখা, যা বাস্তবায়নে আমি উন্মাদিত হই। কারণ আমার রক্তের সাথে আমি বেঈমানী করতে পারিনা। আমার উত্তরসূরীরা শিখিয়ে দিয়েছে দেশের স্বত্ত্ব ভোগ করে কিভাবে দেশের অমঙ্গল করতে হয়। আমার জন্ম তত্বের ব্যপারে সন্দিহান হলেও আমার স্বত্ত্বার ব্যপারে আমি আপোষহীন বিধায় অমঙ্গলেই আমার তৃপ্তি।

আমি উচ্চ ফলনশীল এক হাইব্রিড। আকারে আকর্ষণীয় হলেও স্বাদে গন্ধে আমি ভয়ংকর এক দেশদ্রোহী। আমাকে ওরা চিনতে পারলেও আমার ইন্টেলেকচুয়ালিটি আর অর্থের মোহে ওদের আদর্শকে আমি বিকিয়ে দিয়ে ত্যাগীদের স্থানে স্থলাভিষিক্ত হতে খুব ভালভাবেই সামর্থ্য হয়েছি। আদর্শের একই বেশে একাকার হয়ে দেশের উন্নয়নকে আমি রুখে দেই অন্তরে লালিত অনাদর্শের শক্তি দিয়ে। স্পর্শকাতর বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের পাগলা ঘন্টা বাজাতে আমাকে বেগ পেতে হয়না মোটেই,কারণ আমিতো দলে ঘাপটি মেরে থাকা লেবাজধারী এক অকুতোভয় জারজ সৈনিক। আমার মাথার উপরিভাগে রয়েছে আদর্শের এক বিশাল রাজনৈতিক ক্ষমতাধর প্যাভিলিয়ন, যা আমাকে রাজনৈতিক জঞ্জাল থেকে মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।

আমি ওদের সাথে থেকেই ওদের চেয়ে ক্ষমতাধর। কারণ, ক্ষমতার পালাবদলে অতিথিবেশে আমার আগমন ঘটলেও আমি ডুয়েল ক্যাপাবিলিটির ধারক। আদর্শবানেরা নিজের খেয়ে অন্যের মঙ্গলে মত্ত থাকলেও আমি অন্যের খেয়ে অন্যের অমঙ্গলে ব্যস্ত থেকেই আমার প্রশান্তি। এদেশের আলো বাতাসে আমি বেড়ে উঠলেও দেশপ্রেম আমাকে উদ্দুদ্ধ করেনি, আমাকে উদ্দুদ্ধ করেছে ওদের আদর্শ, যারা একাত্তরে নিজের দেশকে পরাধীন রাখতে হেরে গেলেও ষড়যন্ত্রের স্কেচ করে নীল নকশাটি বাস্তবায়নের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সীমাহীন বিনাশী ধৈর্যশক্তির ধারক হিসেবে আমি ওদের প্রেমে পড়েই আজ হাইব্রিড হিসেবে আমার আত্নপ্রকাশ ঘটেছে। অর্থের বিনিময়ে আদর্শকে অনাদর্শ বানানোই আমার ম্যানিয়া।

ইদানিং খুব চাপে পড়েছি দেশের মধ্যমনি খ্যাত রাজনৈতিক ভ্যানগার্ডের দূরদর্শিতার কারণে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা,দেশপ্রেম ও সততার ঝটিকা অপারেশনে আমার মুখোশ বারবার খুলে যাচ্ছে, খুলে যাচ্ছে আমার প্রশ্রয়দাতাদের মুখোশ। খুব শক্ত করেই চেপে রাখছি আমার উপরিভাগের দৃশ্যমাণ লেবাস, কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানের চলমান এই টর্নেডো এতই বেগবান যে আমার মুখোশ খুলে যেতে হয়তো আর সময় নিবেনা। একটিভ থাকবেনা আমার আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা, তারাই এখন নিজেদের পদপদবী বাচাতে মরিয়া হয়ে আদর্শের বুলিতে সোচ্চার হয়েও মাফ পাচ্ছেনা। আমার আমলনামা খারাপ হলেও আমার কিন্তু হারাবার ভয় নেই। কারণ,

ভিন্ন মতাদর্শের হয়েও মুখোশের উছিলায় যে পদপদবী উপহার পেয়েছিলাম তা ছিলো বোনাস, আর আমার গড ফাদারেরা যা হারাচ্ছে, তা হলো তাদের আদর্শের অস্তিত্ব আর বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এবার হিসেব মিলিয়ে নিন, ক্ষতির পরিমাণ কার বেশী? আমার না আমার প্রশ্রয় দাতাদের! আগেই বলেছিলাম আমি এক অনাদর্শিক কিট। আমি শুধু তোমাদের হয়ে অমঙ্গল ডেকে আনতে পারি, মঙ্গল আমার মীরজাফরি চরিত্রের সাথে মোটেই যায়না।

সামনে তোমাদের জাতীয় সম্মেলন। সকল আমলনামা দলের ভ্যানগার্ডের নিকট জমায়িত আছে। আমি শুধু তোমাদের মুখোশটা খুলে দিতে ভূমিকা রেখেছি, বাকী আমলনামার চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তোমাদের নৈতিক স্খলনের দায়ে হয়তো পদচ্যুত করে মনোবল হারানো ত্যাগী ও উপেক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করার আভাস পাওয়া গেছে। আমিতো হাইব্রিড! আমার কি হবে? প্রচন্ড ঝড়ে বর্ষিত আমের মালিক কে জানিনা, তবে ছালাটি কিন্তু আমার। এবার ঠেলা সামলাও!

মোস্তাফিজুর রহমান

গোপালগঞ্জ

১৫/১০/২০১৯

মোস্তাফিজুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published.