গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও শনিবার সকাল ১০ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের শিক্ষার্থীদেরকে হল ত্যাগ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্বায়ী করে নৈতিকতার দিক থেকে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. হুমায়ুন কবির।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে বিবদমান গ্রæপ সমূহের মতানৈক্য নিরসন ও সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যগণের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পূজার নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর সকাল থেকেই আরও বেগবান হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, শুক্রবার রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলে খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে ভিসি সমর্থকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গোবরাসহ বিভিন্ন স্থানে মারপিট করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সকল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা শহর থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় নীলার মাঠ এলাকায় ভিসি’র পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ক্যাম্পাসে বাইরে বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় পেটোয়া বাহিনী। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীকেই পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিল পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেখা গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য দেশী অস্ত্রশস্ত্রের নিয়ে মহড়া দেয় ওই বাহিনী। এতে বেশকিছু শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ১৫ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পেটোয়া বাহনীর মহড়া ও রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে অনেক আহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা শহর থেকে ক্যাম্পাসে যেতে পুলিশি বাধায় সার্কিট হাউজের সামনের সড়ক এবং গোবরা সোবাহান সড়কে অবস্থান নিয়ে ভিসির অপসারণের দাবীতে স্লোগান দিতে থাকে।
দুর্নীতিবাজ, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যকারী ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক টর্চার সেলে পরিনত করেছে। বিএনপি-জামায়াত পন্থি এই ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। দফায় দফায় ভিসি বিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান থেকে সরাতে ভিসিপন্থিরা ধাওয়া দিচ্ছে।
উৎকণ্ঠা উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্যেও আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শনিবার সকাল ১০ টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য হলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে ১৪৪ ধারা জারি ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, ধাওয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এদিকে সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগপত্র হাতে পাননি বলেও জানান রেজিস্টার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, শিক্ষার্থীদের উপর কে বা কারা হামলা করছে আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি আন্দোলনকারীর না যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরী হয়নি যে, ১৪৪ ধারা জারি করতে হবে। তবে ভিসি আমাকে ১৪৪ ধারা জারির জন্য অনুরোধ করেছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন মিডিয়াতেও তা প্রকাশ হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর জিনিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তার সঙ্গে ভিসি’র কটাক্ষ আচরণের অডিও-ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর গত বুধবার থেকে এ ভিসি’র বিরুদ্ধে নতুন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। #
গোপালগঞ্জ ভয়েস
২১.০৯.১৯