Tue. Sep 17th, 2024

অমূলক প্রতিযোগিতার সমাজ ব্যবস্থার চাবিকাঠি এখন মূর্খদের হাতে বন্দী। পরিশ্রমী, শিক্ষিত, মার্জিত ও গুণাবলী সম্পন্ন মানুষগুলো ঘামঝরা জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েও বৈধপন্থায় জীবনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে মূর্খ,নীতিহীন, অত্যাচারী ও জুলুমবাজ বহু মানুষ দৃশ্যমাণ কর্মপেশার সাথে সম্পৃক্ত না হয়েও অবৈধভাবে অলস অর্থের মালিক বনে গিয়ে সমাজ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। এমন মূর্খদের সমাজপতি বানানোর নেপথ্যে কথিত কিছু শিক্ষিত মানুষের সহযোগিতা রয়েছে, যারা নামধারী শিক্ষিত হলেও কিছুকিছু ক্ষেত্রে মূর্খদের চাইতেও ভয়ংকর। মূর্খ সমাজপতির অর্থের ঝনঝনানি থাকলেও বিদ্যাবুদ্ধিতে পিছিয়ে থাকায় শিক্ষার অভাব পূরনের লক্ষ্যে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সমাজের কথিত কিছু শিক্ষিত মানুষের মগজ ও স্বত্ত্বা কিনে নিয়েছে। এক্ষেত্রে মূর্খ ধনবান ও কথিত শিক্ষিত মূর্খের চামচা উভয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজব্যবস্থা।

অবৈধ অর্থের দাপটে মূর্খ ধনবান যখন শিক্ষিত ও নীতিবান মানুষদের নাকে রশিবেধে প্রচলিত কানুনকে উল্টে দিয়ে মনগড়া সিদ্ধান্তকে কথিত কানুনে রুপান্তর করার জন্য কোনঠাসা করে রাখে, সে সমাজের হৃতপিন্ডে তখন পচন ধরে। যে সমাজ ব্যবস্থায় আমরা সকলেই আজ অধিকার হারিয়ে আইন ও মানবতাকে বিপন্ন হতে দেখছি। মুর্খের হাতের গলাধাক্কা খেয়ে শিক্ষিত ও নীতিবানদের এখন নির্বাক থাকার চিত্র দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অবৈধ অর্থের কাছে শিক্ষা ও সততা এখন ধরাশায়ী। জ্ঞানী আর শিক্ষিতরা এখন শিক্ষার আলো ছড়াতে ভয়পায়। কারণ শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ গুলো আত্নসম্মান বাচানোর ক্ষেত্রে ন্যচারালি ভীতু হয়। ঠিক এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মূর্খরা অর্থবিত্তের জোরে সমাজপতি বনে যায়।

পরিশ্রম, প্রচেষ্টা অধ্যবসায় মানুষের জীবনব্যবস্থার পরিবর্তন আনলেও মূর্খদের রাতারাতি বদলে যাওয়ার দৃশ্য রীতিমতো সকলকে ভাবিয়ে তুলছে। শিক্ষিত সম্মানী মানুষগুলো মূর্খ ধনবানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দাড়াতে ভয় পেলেও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল এজেন্সিগুলো ঠিকই এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদের মালিকেরা অনেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনের খাচায় বন্দী হয়েছেন,কেউবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে স্বীয় শক্তি ও সামর্থ প্রমাণ করার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে কাউন্টার এ্যাটাকে জীবনের শেষ অধ্যায় পার করেছেন। তবুও মূর্খ সমাজপতিদের জ্ঞানের চক্ষুর পোষ্টমর্টেম হয়নি। আধিপত্য ধরে রাখতে নিয়মিত চলছে শোডাউন ও অন্যের সম্পদ লুটের মহাউৎসব।

গুনীজন যে সমাজে সমাদৃত হয়না, সে সমাজে নতুন গুনীজন জন্ম নেয়না। অত্যাচারীর অত্যাচার ও পেশিশক্তির প্রভাব নির্দিষ্ট একটা সময়ে এসে চল্লিশার মুখোমুখি হয়,কিন্তু জ্ঞানী ও গুনীজনের আলোকিত রশ্মির প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজকে গতিশীল করে। পরিবর্তনের পালাবদলে গুটিকয়েক ব্যক্তি চরিত্রের চিত্র পাল্টে গেলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়না, সমাজ তখনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যখন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যমনির আসনে মূর্খ ধনবানরা অবৈধ অর্থের দাপটে জুরি হিসেবে আসীন হয়।

মানদণ্ডহীন হীনমন্যতার অধিকারী মানুষগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সচেতন সকলেরই সোচ্চার হওয়া দরকার। বিবেকের পোষ্টমর্টেম করে বেচে থাকার স্বার্থকতা জীবন দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক বিধায় ঘুনে ধরা সমাজকে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিতে এগিয়ে যেতে হবে পরিবর্তনের প্রজ্ঞা ও প্রত্যয় নিয়ে। ছোট্ট একটি দৃশ্যমান স্নায়ুযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারলেই সমাজ ব্যবস্থার চালিকা শক্তি আবারও যোগ্যদের হস্তগত হবে। প্রয়োজন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিবেকের তাড়নায় উদ্ধুদ্ধ মানুষগুলোর সমন্বিত প্রয়াস। সমাজের অনাচার দূর করতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধের যুগল পদক্ষেপ অপরিহার্য বিধায় বিবেককে জাগ্রত করুন, সমাজ বদলে যাবে, যোগ্যরাই সমাজের নেতৃত্ব দিবে। যে দৃষ্টিতে আপনি অযোগ্যের উত্থান দেখেছেন, সেই দৃষ্টিই আপনাকে অধঃপতন দেখাতে প্রস্তুত, প্রয়োজন একটু সম্মিলিত সাহস ও সংকল্প।

মোস্তাফিজুর রহমান।
গোপালগঞ্জ।
তারিখঃ ২৬/০৫/২০১৯ ইং।

Leave a Reply

Your email address will not be published.