Tue. Sep 17th, 2024

প্রত্যাশিত কিছু না পাওয়ার বেদনা যেমন নিজেকে খুব পীড়া দেয়,ঠিক তেমনি আপনার কাছ থেকে যারা প্রাপ্তি আশা করে বঞ্চিত হয়, তারাও মনক্ষুন্ন হয়ে আপনার প্রতি আস্থা হারায়। চাওয়া পাওয়ার এই ফারাকের মাঝেই আপনার সকল পারফর্মেন্স লুকিয়ে আছে। আপনার কর্মতৎপরতার পুরোটা যখন প্রকাশ্যে চলে আসে, ঠিক তখনি আপনার ভালমন্দ কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের স্লোগান ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের পুরো অংশ জুড়ে স্হান পায়। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে এটা শতভাগ প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নেতা কর্মীদের বিগত সময়ের আমলনামার মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত সমীকরণের সমীক্ষায় অনেক কিছুই দৃশ্যমাণ। “ব্যক্তির চেয়ে, দল বড়, দলের চেয়ে, দেশ বড় ” প্রবাদটিকে স্বার্থক রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতার সার্বিক মূল্যায়নে হেরফের প্রকাশ পাওয়াটা যুক্তিযুক্ত বলেই বিবেচ্য।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মাননীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজ দলীয় নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মূল্যায়নের যে ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করেছেন , তার হিসেব তৃনমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কষিত হিসেব থেকে সম্পূর্ণভাবেই আলাদা। কারণ নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি হয়তো প্রথমত ব্যক্তির যোগ্যতা ও কর্মকাণ্ড মূল্যায়নে অভিষেক করেন, দ্বিতীয় ধাপে যোগ্যতা ও কর্মকান্ডে কৃতকার্য ব্যক্তি দলের জন্য কোন ধাপে কতটা অবদান রাখার যোগ্য ও প্রযোজ্য , সে বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে থাকেন। দলের নিদিষ্ট একটি ধাপে অবদান রাখার জন্য মনোনীত হলেই তৃতীয় ধাপের অগ্নিপরীক্ষার জন্য ” নো কম্প্রোমাইজ ফর কোয়ালিটি টু মেক পলিটিকাল লিডার আউট অব কনট্রোভার্সি ” ফর্মুলায় দেশের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য তিনি কতটা উপযুক্ত, সে বিষয়ে জুরি বোর্ডের একক বিচারক হিসেবে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কিংবা রাষ্ট্রের ভাইটাল পোষ্টের গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী উপহার দেন বা পদায়ন করে থাকেন ( নিজস্ব চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ) । এই ক্ষেত্রে আমজনতা ও কথিত রাজনীতিবিদদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসেব ভগ্নাংশের মতোই জটিল অথবা রেওয়ামিলের “সমাপনী মজুদ পন্যে”র ন্যায় অগ্রহণযোগ্য একটি উপাদান হিসেবেই আপনি বিবেচিত।

কিছু রাজনীতিবিদ” প্রচারেই প্রসার ” প্রবাদটিকে কোট করে ব্যানার,ফেস্টুন ও মিডিয়ায় নিজ কর্মকাণ্ডের খতিয়ান বহুল প্রচার করে দলের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি কাড়তে চেয়েছেন। কেউবা তৃণমূলের জন্য সাময়িক কল্যাণকর কর্মকান্ডে নিযুক্ত হয়ে স্বাক্ষীগোপাল হিসেবে আমজনতার বিশাল বহর নিয়ে দলীয় নানান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে স্বীয় ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার লৌকিক মূর্তি দৃশ্যমাণ করেছেন। কেউবা নেত্রীর পছন্দের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে সোচ্চার থেকে নিজেকে নিবেদিত রাজনৈতিক নেতা বা দলের আনুগত্য হিসেবে সম্প্রচারের মাধ্যমে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই নিজ এলাকার জনগণ থেকে ডিটাচড্ হয়ে শুধু কেন্দ্রের ক্ষমতাধরদের পিছনে সারাবছর আরাধনায় ব্যস্ত ছিলেন। এমন রাজনৈতিক নেতা ও সমর্থকদের প্রত্যাশা ভিত্তিহীন হিসেবেই ফসকে গিয়েছে।

তৈল সংস্কৃতির এই যুগে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য অধিকাংশ নেতা ইলেকট্রনিকস মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়া খ্যাত সেল্ফি পাবলিসিটিতে নির্ভরশীল হয়ে কেন্দ্রীয় টপ ফোরামের আশীর্বাদ নিতে চেষ্টা করেছেন। এটার একমাত্র লক্ষ্য জনগণকে ঠকিয়ে বা কথিত ক্ষমতাবান হিসেবে নিজকে প্রদর্শন করে পদ পদবী বাগানোর অপচেষ্টা ব্যতীত অন্যকিছু নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে এটা নেত্রী খুব ভালভাবেই বুঝেন বিধায় সুদূরপ্রসারী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা ভুলের ফাদে পা দেন না। দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি অটুট বলেই অনেকে পদ পদবী হারিয়ে নাখোশ বা অযৌক্তিক সমালোচনা করে নিজ ক্যারিয়ারের বারোটা বাজাতে ভ্রুক্ষেপ করছে না।

নিজ পদ পদবী ও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে যারা তটস্থ, তারা কথিত রাজনীতিবিদ ছাড়া অন্য কিছু নয়। ক্ষমতাকে পুজি করে নিজ স্বার্থসিদ্ধির মানসে এদের রাজনীতি নামক অপরাজনীতিতে দল, দেশ ও দেশের মানুষ সমানতালে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিধায় মৌসুমি রাজনীতির মূল্যায়নের আয়ুকাল অনেকটা শেষের দিকে। দলের আদর্শ অন্তরে লালন করে রাজনীতির মাধ্যমে যারা দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তারা অনেকটা ধৈর্যশীল ও নিরহংকারী হয়ে থাকে। পদ পদবী এদের মূখ্য বিষয় নয়,এদের লক্ষ্য দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশমাতৃকার সেবা করা ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য নিজ স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে মানবিক মানুষ হিসেবে আত্নপ্রকাশ করা। যারা এটাকে লালন করে অতীত পার করেছেন, তাদের জন্য লোক দেখানো প্রচারণা ও অয়েলিং ব্যাতিত উপযুক্ত পদ পদবীর অধিকারী হতে বেগ পেতে হয়নি। ব্যতিক্রম যা কিছু হয়েছে, তা দল ও দেশের স্বার্থে আমজনতার অপছন্দের হলেও উপযুক্ত বিবেচনায় মূল্যায়িত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি ও যোগ্যতার মানদন্ডে রাজনীতিবিদের কোয়ালিটির ভেরিফাই দলীয় প্রধান ও আমজনতার মূল্যায়নে পার্থক্য হওয়াটা খুবই যৌক্তিক। কারণ আপনি যাকে দেখেছেন মুমূর্ষু রোগীর সেবা করতে, তাকেই হয়তো নীতিনির্ধারণী ফোরাম দেখেছে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিতে। রাজনৈতিক দৃষ্টি আর আমজনতার গড়পড়তা দৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিধায় ” পলিটিকাল ম্যালপ্রাকটিস বিহাইন্ড দ্য ভিজিবল পলিটিক্স ” বাক্যটি প্রাপ্তির পিছনে অনেক ভূমিকা রাখে।

অনেকে হাইব্রিড নেতাদের পক্ষে বিপক্ষে যৌক্তিক অযৌক্তিক অবস্থান নিয়েছেন। অনুপ্রবেশ শব্দটার প্রয়োগবিধি অবস্থান নির্ণয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রবেশ না ঘটলে শূন্যতা আর দৈন্যতার পরিপূর্ণতা কিভাবে প্রকাশ পাবে এটা ভেবে দেখা দরকার। দৃশ্যমাণ ইমারত ভাঙার পরবর্তী ধাপ হলো নতুন করে গড়ানোর প্রত্যয়ে অগ্রগামী হওয়া। না ভাঙলে গড়বে কি করে? রিসাফলিং করেই শুদ্ধতার অভিষেক হয়। অনুপ্রবেশকারীর অতীত আমলনামায় যদি জনস্বার্থ বিরোধী ও দেশদ্রোহিতার কোন ভিজিবল এভিডেন্স না থাকে, তাহলে নিজ অবস্থানের অশুদ্ধতা বা নীতিগত অসামঞ্জস্যতা অনুধাবনপূর্বক নিজ ইচ্ছাশক্তিতে অনুপ্রানিত হয়ে ভিন্ন মতাদর্শ অন্তরে লালন করার স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণ করে। আর মতাদর্শের এই ক্রাইটেরিয়া যদি অন্য রাজনৈতিক দলের জন্য ফলপ্রসু হয়, তাহলে দলের সার্বিক স্বার্থ বিবেচনায় দলীয় ফোরামে নতুন কাউকে স্থান দেওয়াটা ঢালাওভাবে বিতর্কিত হলেও পলিটিকাল থার্ড আই খুব যৌক্তিকভাবেই পারমিট করে। এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর আমজনতার কনছেপ্টে অনেকটা ফারাক বিধায় রাজনৈতিক শুদ্ধচর্চার চেয়ে অযৌক্তিক সমালোচনা বেশী ফলাও হয়। দলকে যদি এতই ভালবাসেন, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আরও মনোযোগী এবং আস্থাশীল হওয়া প্রয়োজন।

রাজনীতির হিসেব নিকেশ অযৌক্তিক সমালোচনায় সীমাবদ্ধ নয়। অঙ্গীকার ও বাস্তবায়নের ফারাকই সমালোচনার জন্ম দেয়। দল ও দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে নিজেকে কতটা উপযোগী করে তুলেছেন, সেটার বিচার বিশ্লেষণে আপনার মূল্যায়ন নির্ভরশীল। দৃশ্যমাণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা ব্যাতিত চার যুগের দলীয় পরিচয় পদ পদবী পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার নয়। তৈলমর্দনও পলিটিকাল আপগ্রেডেশনের ইনোভেটিভ পলিসি নয়। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আদর্শের লালন ও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অটুট আস্থা নিয়ে দেশমাতৃকার উন্নয়নে নিজের অগ্রণী ভূমিকার অন্তিম ফলাফল পদ ও পদবী। রাজনীতিতে নিজেকে কৃত্তিমভাবে ফোকাস করে দলীয় অবস্থান মজবুত করা খুবই কঠিন ও জটিল। কারণ আপনার প্রিভিয়স আমলনামার অনেক স্থিরচিত্র আমজনতার নজর ছাড়াও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে সঠিক সময়ে দলীয় প্রধানের হাতে জমা হয়েছে বিধায় সচেতন জনগণের সময়ের সমর্থিত স্বাক্ষী এবং বিচক্ষণ দলীয় প্রধানের মূল্যবান ও নিরপেক্ষ জাজমেন্ট আপনার জন্য সঠিক মূল্যায়ন। সুতরাং পেলেই খুশী, না পেলেই অবমূল্যায়ন এর কথিত রেওয়াজের বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। কর্মের সঠিক মূল্যায়ন পেতে সম্প্রচার ও সমালোচনার প্রয়োজন হবেনা।

মোস্তাফিজুর রহমান

 

 

 

 

মোস্তাফিজুর রহমান।
গোপালগঞ্জ।
তারিখঃ ২১/১২/২০১৯ ইং।

Leave a Reply

Your email address will not be published.