
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ডুমুরিয়া। নিম্নাঞ্চল এ গ্রামের সাধারণ মানুষের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষানুরাগী রথীন্দ্র নাথ রাজ বংশী এ পাঠশালাটি গড়ে তোলেন দেশ স্বাধীনের পরপর। গ্রামের গাছতলা, বাড়ির আঙিনা ঘুরে পাঠশালাটি এখন ডুমুরিয়া গ্রামের একটি মন্দিরে মাদুর বিছিয়ে চলছে পাঠদান। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এখানকার মানুষ এখনো তাদের সন্তানদেরকে প্রথমে পাঠশালায় পাঠান। তবে এ পাঠাশালার অন্যতম দিক হল তালপাতায় লেখা।
ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের তালপাতার মাধ্যমে লিখিয়ে দেওয়া হয় হাতে খড়ি। তালপাতায় শিক্ষকের এঁকে দেয়া বর্ণমালার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বর্ণমালা লেখা শেখে শিশুরা। মুখে-হাতে কালি মেখে আনন্দ আর উল্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা নিচ্ছে এসব এলাকার শিশু।
শিশু শিক্ষার্থী বলেন, আমার তালপাতায় লিখতে ভালো লাগে। বড় হয়ে আমি চাকরি করবো।
এসব পাঠশালায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুড়িয়া গ্রাম, রূপাহাটি গ্রাম ও ভৈরব নগর গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা নিতে আসেন। তালপাতার পাঠশালার মাধ্যমে হাতে খড়ি হবার পর উপযুক্ত ভাবে তৈরি করে শিশুদের ভর্তি করা হয় পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে কোনো ভবন আর সরকারি কোনো সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ স্থানীয় সাহায্য সহযোগিতায় একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব পাঠশালা। তাল পাতায় শিক্ষকের এঁকে দেয়া বর্ণমালার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বর্ণমালা লেখা শেখায় হাতের লেখা ভালো হওয়ায় এসব পাঠশালায় তাদের সন্তানদের পাঠাচ্ছে অভিভাবকেরা। যা শিশুদের বেড়ে উঠতে এবং চরিত্র গঠনে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে কাজ করছে।
এলাকাবাসী বলেন, স্যারেরা টাকা না পেলেও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়ায়।
নির্দিষ্ট কোনো বেতন ছাড়াই শিশুদের হাতের লেখা, বাল্যশিক্ষা ও নীতি নৈতিকতা শেখানো হয় বলে জানালেন পাঠশালার এ শিক্ষিকা।
তালপাতার পাঠশালার শিক্ষিকা কাকলী কির্ত্তনীয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা কোন সহৃদয় ব্যক্তি স্কুলের দৃষ্টি দিতো তাহলে ঐতিহ্যটা ধরে রাখা যেতো।
তালপাতায় কালি দিয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মন্তব্য করে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেন, প্রয়োজনে তারা চাইলে আমরা তাদেরকে কাগজ সরবরাহ করবো।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার আরো বলেন, ওই মন্দিরের অবকাঠামো ভালো নয়, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। সংস্কারের ব্যাপারে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নিবো।
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী তালপাতার পাঠশালাটি পাবে তার নিজস্ব ঠিকানা ও সরকারি সহযোগিতা এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার শিক্ষানুরাগীদের।
এস.এম আমীর হামজা
জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ, সময় টেলিভিশন।
১০.০৬.২০১৯