
মিজানুর রহমান মানিক,
করোনা না আসলে বোধহয় সত্যিকারের আপনপর চেনা যেত না, বেঁচে থাকতে স্বজনদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতেন যিনি, করোনায় মৃত্যুবরণ করায় সেইসব স্বজনরা লাশ রেখে পালিয়ে গেলো, কিন্তু দায়িত্ব আর মানবতাবোধ থেকে পালাননি গোপালগঞ্জ সদরের করোনার সম্মুখ যোদ্ধা, সদর ইউএনও মো. সাদিকুর রহমান খান। রবিবার গোপালগঞ্জ পৌর শ্মশানে দুপুরে নিত্যনন্দ বল্লভের মুখাগ্নি সহ সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন ইউএনও মো. সাদিকুর রহমান খান।
গত শনিবার বিকালে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মারা যান কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের নারায়ন খানা গ্রামের নিত্যানন্দ বল্লভ (৬০)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ায় লাশ সৎকারে স্বজনেরা কেউ এগিয়ে আসেননি। ছেলে হাসপাতালে পিতার লাশ ফেলে পালিয়ে যায় সন্তান। অবশেষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিকুর রহমান খান সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, গত শনিবার বিকালে করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নিত্যানন্দ বল্লব নামে এক ব্যক্তির। সে গত ৬ জুন কোটালীপাড়া থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। মৃত্যুর খবরটি তার স্বজনদের জানানো হলেও তারা আর কোনো খোঁজ নেননি। হাসপাতালের প্রধান গেটে তার লাশ পড়ে আছে। পাশ দিয়ে শত শত মানুষ যাওয়া আসা করছে। ছড়িয়ে পড়তে পারে তার কাছ থেকে করোনা ভাইরাস।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: অসিত মল্লিক ও সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, গত শনিবার বিকালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রোগী মারা যান। আমরা নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তার ছেলে কাগজপত্রে লাশ বুঝে নিলেও পরে লাশ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। অবশেষে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় মৃতের লাশ পৌর শ্মশানে দাহ করার ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর ইউএনও মো. সাদিকুর রহমান খান জানান, মানুষের জন্য ঝুঁকি নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি, দায়িত্ব আর মানবতাবোধ আমাদেরকে ঝুঁকি নিতে সাহস যোগায়, যখন শুনলাম, সন্তান তার বাবার লাশ রেখে পালিয়েছে, তখন নিজেই লাশের সৎকারের ব্যবস্থা করেছি।
গোপালগঞ্জ
২৮.০৬.২০